নিজস্ব প্রতিনিধিঃ কুমিল্লা জেলার মেঘনা থানাধীন ভাটেরচর ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের (১০) দশ বছরের ছেলে ইমন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। অভিযোগ উঠেছে এর আগে গত ১৯/১/২০২১ ইং তারিখ আনুমানিক ৩.০০ ঘটিকায় সৎ মা মোছাঃ বকুল (৩২) ইমনকে ভাত খেতে দিলে এরপর থেকে ইমন বমি করে।
এ বিষয়ে সরোজমিনে প্রতিবেদক গত শুক্রবার ২২/১/২১ ইং তারিখ মেঘনা থানাধীন কাশিপুর গেলে পার্শ্ববর্তী লোকজন জানান, ইমনের আপন মা রোকসানা ২০ বছর পূর্বে মোঃ মমিন এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরপর ১০/১২ বছর সংসার করার পর মোঃ মমিন এর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করে। ১ম সংসারের ছেলে এমন এর বয়স ১০ এবং মেয়ে মিম এর বয়স বর্তমানে ১৬ বছর। মোছাঃ রোকছানা ১ম বিবাহ বিচ্ছেদের পর ২য় বিবাহ করার পর অন্যত্র স্বামী সংসার করতে থাকেন। কিন্তু রোকছানার ছেলে ও মেয়ে পিতা মমিনের ঘরে সৎ মা মোছাঃ বকুলের সাথে বসবাস করতে থাকে। কিন্তু, প্রায় সময়ই সৎ মা বকুল কর্তিক নাকি ইমন ও মিম অমানবিক নির্যাতিত হত। বিগত ২ বছর পূর্বে মিমের বিয়ে হয়। এরপর থেকে নাকি ইমনের উপর নির্যাতন আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়।
এসময় পার্শ্ববর্তী ইমনের চাচা চাচি এবং মুরুব্বীরা জানান, ঘটনার দিন ইমন সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। সৎ মা মোছাঃ বকুলের কাছ থেকে ভাত খাবার পর থেকেই ইমন নাকি বমি করতে থাকে। দীর্ঘ কয়েক বার বমি করলেও কৌশলে ডাক্তারের কাছে নিতে বিলম্ব করে। বমির খাবার উঠানে পড়লে তা খেয়ে ৭-৮ টি মোরগ মারা যায়। ঘটনার পরদিন ২০/১/২১ ইং তারিখ অবস্থা বেগতিক দেখে সৎমা বকুল আশেপাশের সকলকে জানিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিজেই নিয়ে যান। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে সামান্য পেটের ব্যথা বলে টিকিট কাটেন। যার ফলে, ডাক্তার পেটের ব্যথার চিকিৎসা করেন।
পরবর্তীতে এ ব্যাপারে একই দিনে প্রতিবেদক সৎ মা মোছাঃ বকুলের সাথে শুক্রবার ২২/১/২১ ইং তারিখ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এরপর যেহেতু বকুলের পিত্রালয় কাশিপুর এর পার্শ্ববর্তী গ্রাম দড়ি মির্জানগর হওয়ায় বকুলের পিত্রালয়ের কাছে যান, সেখানে গিয়ে জানা যায়, বকুলের মা জায়েদা (৪৫) অসুস্থ তাই বকুল তার মাকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছে একথা বলেন বকুলের ভাই মোঃ জসিম (৩৫), পিতাঃ মোঃ শাহজাহান। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জানান, ঘটনার দিন হঠাৎ করেই নাকি বমি করতে থাকে ইমন। এরপর পার্শ্ববর্তী ফার্মেসি থেকে ইমনের জন্য তার বোন বকুল ঔষধ আনেন। ঔষধে কার্যকর না হলে পরবর্তীতে ফকিরের শরণাপন্ন হন কিন্তু ততক্ষণে অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে পড়ে। চিকিৎসা করার মত টাকা ছিলনা বিধায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে বিলম্ব হয়। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ইমন সেদিন স্ট্রোক করেছিলো। এরপর বলেন, রিপোর্ট ই প্রমাণিত হবে আমরা সত্যি বলছি কিনা। আমার বোন সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমার বোনের উপর ষড়যন্ত্র করে অপবাদ দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যে, প্রশাসন এবং চেয়ারম্যান লাশটিকে মাটি দিয়ে ফেলতে বলেছেন। কারণ, রিপোর্ট এ বিষ খাওয়ানোর কোন আলামত পাওয়া যায়নি। আর মোরগ মরেছে কিভাবে এ প্রশ্নের জবাবে জসিম বলেন, এটাও সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইমনের চাচা শাহীন নাকি একজন মাদকাসক্ত। তারাই ষড়যন্ত্র করছে এ ধরনের কার্যক্রমে। এরপর প্রতিবেদক, জসিমের কাছে সত্যতা জানার জন্য তার বোন বকুলের নাম্বার চাইলে জসিম নাম্বার দেন। কিন্তু প্রতিবেদক ফোন দিলে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এরপর প্রতিবেদক ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে ইমনের লাশটি মাটি দিতে বলেছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ঘটনার দিন আসলেই কিছু না কিছু ঘটেছিল। জসিমকে বেঁধে পুলিশের কাছে সোপর্দ করার কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, লাশ দাফন করবে কি না করবে না সেটা তদন্ত করে পুলিশ বিবেচনা করবে। আমি একজন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ দায়িত্ব আমার নয়।
ইমনের লাশটি সেদিন বিকেলে দাফন করা হয়। তবে পুলিশ এর আগে কুমিল্লা মেডিকেল হাসপাতালে লাশটির পোস্টমর্টেম করেন। রিপোর্ট আসলে প্রকৃত সত্যতা বের হবে।
এ ব্যাপারে গত ২৫/১/২১ ইং তারিখ ইমন এর আপন মা মোছাঃ রোকসানা কে প্রতিবেদক জিজ্ঞাসাবাদ করতে গেলে তিনি জানান, আমার ছেলে এবং মেয়ে কে ওদের সৎ মা বকুল প্রায়ই নির্যাতন করতো। বকুল সম্পত্তির লোভে আমার ছেলেকে বিষপান করিয়েছে। আর না হলে সেই বমি খেয়ে ৭-৮ টা মোরগ মরল কিভাবে? আমি আমার ছেলেকে ফিরে পেতে চাই আর কিছু চাইনা। এ ব্যাপারে, রোকসানা নাকি একটি জিডি করতে গিয়েছিলেন কিন্তু প্রশাসন নাকি জিডিটি নেয় নি। তবে প্রশাসন আশ্বস্ত করেছেন, পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট সত্যি হলে, জিডিটি অবশ্যই নিবে। কিন্তু ততক্ষণে যদি আসামি পালিয়ে যায় তার দায়ভার কে নিবে সেটা জানতে চেয়েছেন মোছাঃ রোকসানা। তিনি বলেন, জিডি না করার জন্য আমাকে কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন পুলিশ মহলের সহায়তা চাচ্ছি।
এ ব্যাপারে ইমন এর বোন মিম বলেন, আমি আমার ভাইকে ফেরত চাই। আমাকে এবং আমার ছোট্ট ভাইটিকে প্রায়ই নির্যাতন করতো আমার সৎ মা বকুল। আমার ধারণা আমার ভাইকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছে।