রাহাদ হোসেনঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা’র ৯১ তম জন্মদিন উপলক্ষে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভা, দোয়া ও কেক কাটা অনুষ্ঠিত।
এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি, ঢাকা- ৫ সাংসদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মনিরুল ইসলাম মনু।
আয়োজনটির সভাপতিত্ব করেন, ঢাকা-৫ সংসদীয় আসনের, ১৪ দলের প্রধান সমন্বয়ক ও যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সংগ্রামী সাধারণ সম্পাদক জননেতা জনাব হারুনর রশীদ মুন্না।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ৬২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ্ব মোস্তাক আহমেদ,৪৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি, আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন গেসু।
পরিচালনায় ছিলেন, ঢাকা-৫ আসনের মুখপাত্র ও ৪৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী আবুল কালাম অনু ।
এ সময় এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু বলেন, এই মাসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত শোকের মাস, এই মাসে আমরা হারিয়েছি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা সহ বঙ্গবন্ধুর পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, এসবি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্ণেল জামিল, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হক, প্রায় একই সময়ে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তাঁর অন্ত:সত্তা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবী, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে সজীব সেরনিয়াবাত এবং এক আত্মীয় বেন্টু খান কে।
সর্বশেষে বলেন, আজ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছার জন্মদিনে বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের সকল শহীদ সদস্যের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা। এত সুন্দর একটি আয়োজনে আসতে পেরে আমি ধন্যবাদ জানাই আমার ভাই হারুনর রশীদ মুন্না এবং কাউন্সিলর আবুল কালাম অনুকে।
এই সময় জননেতা হারুনর রশীদ মুন্না বলেন, আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামটি মানি লাল-সবুজ পতাকার প্রিয় জন্মভূমি আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। আমার নেতা শেখ মুজিবুর রহমান যখন বঙ্গবন্ধু উপাধি পায়নি তারও আগের কথা, ৭ই মার্চের রেসকোর্স ময়দানে যাওয়ার আগে শেখ মুজিবুর রহমানের অনেক নেতাকর্মী তাকে রেসকোর্স ময়দানে যেয়ে কী বলতে হবে সে ধরনের অনেক দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। তবে তার সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন্নেছা, বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান কে বলেছেন, রেসকোর্স ময়দানে আপনার যেটা ভালো মনে হয় সেই বক্তব্যটাই দিবেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা ১৯৩০ ইং সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন সাবেক রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিণীই নন, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রী। বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে তিনি বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর দৃঢ় চেতনাকে আরো শাণিত করেছিলেন এই মহীয়সী নারী। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও বিশিষ্টজনের কথা উঠে এসেছে। তাদের মধ্যে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম অগ্রগণ্য।
বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের পারিবারিক নাম রেণু। বঙ্গবন্ধুর বাল্যকালে বাবা-মা হারানো চাচাতো বোন রেণুর (বয়স মাত্র ৩ বছর) সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের সদস্যরা। মিশনারি স্কুল থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব অল্প-বিস্তর প্রাথমিক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। এরপর আর পড়ালেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী, বুদ্ধিদীপ্ত, বিচক্ষণ, দায়িত্ববান ও ধৈর্যশীল নারী। বঙ্গবন্ধুর জীবনে তার প্রভাব ছিল অপরিসীম।
বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘রেণু খুব কষ্ট করত, কিন্তু কিছুই বলত না। নিজে কষ্ট করে আমার জন্য টাকাপয়সা জোগাড় করে রাখত, যাতে আমার কষ্ট না হয়।’ আর এক জায়গায় লিখেছেন, ‘সে [রেণু] তো নীরবে সকল কষ্ট সহ্য করে, কিন্তু কিছু বলে না। কিছু বলে না বা বলতে চায় না, সেই জন্য আমার আরও বেশি ব্যথা লাগে।’
বঙ্গবন্ধু তার আত্মজীবনীতে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে গোপালগঞ্জ জেলগেটে কথোপকথন সম্পর্কে বলেন, “রেণু আমাকে যখন একাকী পেল, বলল, “জেলে থাকো আপত্তি নাই, তবে স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখো। তোমাকে দেখে আমার মন খুব খারাপ হয়ে গেছে। তোমার বোঝা উচিত আমার দুনিয়ায় কেউ নাই। ছোটবেলায় বাবা-মা মারা গেছেন … তোমার কিছু হলে বাঁচব কী করে?’ …আমি বললাম, খোদা যা করেন তাই হবে, চিন্তা করে লাভ কী?”
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, “জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত (বঙ্গবন্ধুর) পাশে ছিলেন, যখন ঘাতকেরা আমার বাবাকে হত্যা করল, তিনি তো বাঁচার আকুতি করেননি। তিনি বলেছেন, ‘ওনাকে যখন মেরে ফেলেছ, আমাকেও মেরে ফেল।’ এভাবে নিজের জীবনটা উনি দিয়ে গেছেন।” এভাবেই বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুখ-দুঃখের সাথি হয়েই শুধু নয়, মৃত্যুতেও সাথি হয়েছিলেন তার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শাহাদত বরণ করেন।
হারুনর রশীদ মুন্না আরো বলেন, সামনে প্রতিটি ওয়ার্ড ভিত্তিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কে দায়িত্ব দেয়া হবে। যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত করতে কোন চিটার বাটপার এর জায়গা নেই। তৃণমূল পর্যায়ের ত্যাগী পরিশ্রমি নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। সেই লক্ষ্যে আমার বড় ভাই এর সমতুল্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ভাইয়ের সাথে থেকে পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
সর্বশেষে তিনি, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা সহ তাদের পরিবারের সকল নিহত শহীদ সদস্যদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানান।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা-৫ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের সকল নেতাকর্মী।